আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গত বছর মার্কিন বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল যুদ্ধবিরতির দাবিতে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ৫০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে। “সিজফায়ার নাও” স্লোগানে মুখর ছিল মার্কিন ক্যাম্পাসগুলো। বিক্ষোভ চলাকালে ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “যুদ্ধ শেষ” এই ঘোষণার পর থেকেই যারা যুদ্ধবিরতির দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ইন্ডিয়ানার আর্লহাম কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মী খালিদ বলেন, “আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল স্বস্তির। কারণ এখন আমার আত্মীয়স্বজনসহ গাজার মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি নিতে পারবে। কিন্তু একই সঙ্গে কিছুটা আশঙ্কাও আছে—এই শান্তি কতটা স্থায়ী হবে তা নিয়ে।”
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমাদ বলেন, “শান্তিচুক্তির খবর শুনে আনন্দে ভরে গিয়েছিল মন, কিন্তু সেই সঙ্গে একটা অস্বস্তিও কাজ করছিল। হয়তো সত্যিই শেষ হলো—তবু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না।”
নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী থমাস বলেন, “যুদ্ধবিরতি হলেও কাজ শেষ নয়। ক্যাম্পাসে এখনো বিষয়টি সংবেদনশীল; অনেকে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে।”
অন্যদিকে, কলম্বিয়ার ইহুদি শিক্ষার্থী এলিশা বেকার, যিনি গত বছর “অ্যান্টি-ইসরায়েল” আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন, বলেন, “দুই বছর পর ২০ জন জীবিত জিম্মি ফিরে এসেছে—এটাই বড় আনন্দের বিষয়। তবে খুনি ও সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেওয়া কষ্ট দেয়।”
চুক্তির আওতায় ইসরায়েল প্রায় ২৫০ জন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ও ১,৭০০ জন আটক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার আগেই ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন দমন করতে চাপ বাড়িয়েছিল। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল হারায়, এবং কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এমনকি হার্ভার্ড, কলম্বিয়া ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন।
তবু অনেকে মনে করছেন তাদের আন্দোলন ফলপ্রসূ হয়েছে। আহমাদ বলেন, “অনলাইনে গাজার মানুষের মুখে হাসি দেখা—এটাই এখন সবচেয়ে বড় স্বস্তি।”
তবে মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতির সীমা অতিক্রম করায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় সাতজন নিহত হওয়ার খবরে আবারও শঙ্কা ফিরে এসেছে। খালিদ বলেন, “আমি এখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না যে হত্যাযজ্ঞ সত্যিই থেমে গেছে।”
প্রো-ইসরায়েল শিক্ষার্থী বেকার ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার টেকসইতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “যেসব নিরপরাধ মানুষ হামাসের হাতে নিহত হয়েছিল, তাদের মরদেহ এখনো ফেরত আসেনি—এটা চুক্তিভঙ্গ।”
তবে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত জাদ হাসেম কিছুটা আশাবাদী। তিনি বলেন, “এটাই গত দুই বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় আশার মুহূর্ত। এখনই সময় পারস্পরিক সংলাপের—ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলার।”
হাসেমের মতে, “এখন আমাদের একে অপরকে জানার, বোঝার এবং মানবিকভাবে দেখার সময়। তবেই এ ধরনের সংঘাত আর ঘটবে না।”
Your Comment